কোনো রকম গোলযোগ সহিংসতা ছাড়াই সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন। প্রথমবারের মতো সব কটি কেন্দ্রে ইভিএমে অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে জয় পেয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আরফানুল হক রিফাত। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে ৩৪৩ ভোট বেশি পেয়ে তিনি মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। এ নিয়ে কুমিল্লা সিটি করপোশেন গঠনের পর প্রথমবারের মতো জয় পেল আওয়ামী লীগ।
নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১০৫টি কেন্দ্রের মধ্যে রিফাত পেয়েছেন ৫০ হাজার ৩১০ ভোট। আর টেবিল ঘড়ি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট।
এর আগে বুধবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ১০৫টি কেন্দ্রে বিরতিহীনভাবে চলে ভোটগ্রহণ। কোনো ধরনের সহিংসতা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয় ভোট।
ভোটগণনা শুরুর পর প্রাপ্ত ফলাফলে রিফাত ও সাক্কুর মাঝে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। ১০৫ কেন্দ্রের মধ্যে প্রথমে ৫২টি কেন্দ্রের প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা গিয়েছিল সাক্কু এগিয়ে ছিলেন রিফাতের থেকে। তখন রিফাতের ভোট ছিল ২৫ হাজার ৩১৯টি। আর সাক্কুর প্রাপ্ত ভোট ছিল ২৬ হাজার ৬৫টি। পরে ৯৩ কেন্দ্রের প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা গেছে, আরফানুল হক রিফাত পেয়েছেন ৪৪ হাজার ৩৮৫ ভোট। আর মনিরুল হক সাক্কু পেয়েছেন ৪৪ হাজার ৭৭৮টি ভোট। পরে ১০১টি কেন্দ্রের প্রাপ্ত ফলে দেখা যায়, রিফাত পেয়েছেন ৪৭ হাজার ৮৬৩ ভোট। আর সাক্কু ৪৮ হাজার ৪৯২টি ভোট পেয়ে তার থেকে কিছুটা এগিয়ে ছিলেন। এরপরই রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে বিশৃঙ্খলার কারণে রাত নয়টার দিকে ফল ঘোষণা বন্ধ হয়ে যায়। আধা ঘণ্টার বেশি সময় ফল ঘোষণা বন্ধ থাকার পর রাত সাড়ে নয়টার দিকে আরফানুল হক রিফাতকে ৩৪৩ ভোটে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী কুমিল্লায় ৬০ শতাংশ ভোট পড়েছে। আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ের সামনে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, কুসিকে প্লাস-মাইনাস ৬০ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো বিরূপ মন্তব্য আমরা পাইনি। সার্বিকভাবে বলা যায়, ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে। ভোটারদের কাছ থেকেও তেমন কোনো অভিযোগ পাইনি।
এদিকে নির্বাচনে কোনো সহিংসতার খবর না পাওয়া গেলেও কিছু কিছু জায়গায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে) ভোট দিতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েন অনেকে। ফিঙ্গারপ্রিন্ট না মেলা, এক বুথের ভোটাররা অন্য বুথে যাওয়া নিয়ে এমন ভোগান্তির সৃষ্টি হয় বলে অভিযোগ। করপোরেশন নির্বাচনে প্রায় সব কেন্দ্রেই ইভিএম স্লো ছিল। এ কারণে ধীরগতিতে ভোট পড়ায় দিন শেষেও লম্বা সারিতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ভোটারদের। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইভিএম সম্পর্কে ভোটারদের ধারণা না থাকার বিষয়টি। ফলে অনেককে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
কুমিল্লা সিটিতে মেয়র পদে ছয় প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত আরফানুল হক রিফাত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. রাশেদুল ইসলাম, স্বতন্ত্র হিসেবে কামরুল আহসান বাবুল, মো. মনিরুল হক সাক্কু (বিএনপি নেতা ও দুইবারের মেয়র), মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন ও মাসুদ পারভেজ খান। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাসুদ পারভেজ খান প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। অর্থাৎ মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পাঁচ প্রার্থী। এছাড়া সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর মিলে ১৪০ জনের মতো প্রার্থী আছেন। এ নির্বাচনে ৫ নম্বর ও ১০ নম্বর ওয়ার্ডে দুজন কাউন্সিলর প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
কুসিকের ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০ জন। এদের মধ্যে ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২ জন নারী ভোটার এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১২ হাজার ৮২৬ জন। এছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার দুজন।